East Bengal (1971): The unfinished revolution (January 7, 2011)
ঢাকার পল্টন ময়দানে ১৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে যখন আত্ম-সমর্পন দলিল স্বারিত হয়, তখন একদিকে যেমন পাকি¯তানের ভাঙ্গন সম্পাদিত হয় অন্যদিকে বিগত উনচল্লিশ বছর যাবৎ চলে আসা ঐতিহাসিক ভুল ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র কাঠামোর পরিসমাপ্তি ঘটে । দণি এশিয়ার শাসক গোষ্ঠির বিভিন্ন অংশের বেশির ভাগের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটেছে এ রূপ ব্যাখ্যার েেত্র । ফলে গতানুগতিক ও বাজারী ঐতিহাসিকগণ ১৯৬৮-১৯৭২ সালের মধ্যে বয়ে যাওয়া সামাজিক বিুভ ও বিদ্রোহের প্রকৃত ল্য ও উদ্দেশ্যকে সমূলে বিনাশ করে দেয় ।
১৯৪৭ সালের কুখ্যাত দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভক্তি যে একটি এতিহাসিক ব্যার্থতা ছিল আজ ্অবদি কেঊ তা অস্বীকার করতে পরছেনা । কৃত্রিম ও ভঙ্গুর এবং বস্তাপচাঁ আদর্শের স্বরূপ তখনই উন্মুচিত হয় ; যখন জীন্নাহ কেবিনেট মিশনের পরিকল্পনা ও প্রস্তাব গ্রহন করেন । এই পরিকল্পনায় ছিল কনফেডারেশনের মাধ্যমে ভারতীয় ঐক্যের ও বর্ধিত আকারে স্বায়ত্ব শাসন নিশ্চিত করা সহ কনফেডারেশনের কথা ।
নেহেরু সেই সময় বোম্বেতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জিন্নাহ ও মুসলিম লীগ কে এই পরিকল্পনা থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচনা মূলক বক্তব্য পেশ করেন । বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সুদ কূটকৌশলবিদ উইনষ্টন চার্চিলের আদেশে এডউইন মাউনব্যাটেনের মোহনীয় প্ররোচনায় নেহেরু প্রলোভিত হয়েছিলেন । “ভাগ কর -শাসন কর” -এই নীতির মাধ্যমে পুজিবাদী লুন্ঠন ও শোষন ব্যবস্থাটি অব্যাহত রাখাই ছিল তাদেও দুর্ভিসন্ধ্যি ।
রাষ্ট্রের জন্ম দাতাদের নেতৃত্বাধীন কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট রাষ্ট্রটির মাত্র সাতাশ বছর সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া এক বৈষম্যপূর্ন রূপ ধারণ করে। যদিও ষাটের দশকে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল উর্দ্ধোমূখী । কিন্তু এর ফলে তৈরী হয় সামাজিক দ্বন্ধ । র্আথ-সামাজিক উন্নয়ন জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে সমাজে বিরূপ অবস্থা ও জাতীয় বঞ্চনার পরিস্থিতি সৃষ্টি করে । মুলত: পাকিস্তান কোন জাতীয় ঐক্যের রাষ্ট্র হিসাবে সৃষ্টি হয়নি বরং ইহা তৈরী হয়েছিল বহু জাতীয়তা ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র হিসাবে । সহজ কথায় পাকিস্তান একটি আধুনিক ও পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠতে একেবারেই র্ব্যাথ হয়েছে ।
যাইহোক, পাকিস্তানে যে প্রথম গণবিদ্রোহটি হয়েছিল তাতে কোন জাতীয় বিষয় ছিল না বরং তা ছিল শ্রেণীভিত্তিক । ১৯৬৮ সালের গণবিদ্রোহের স্ফুলিংগ এমন উত্থাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল যে ১৩৯ দিন দেশের সবকিছু শ্র্রমিক,কৃষক ও তরুনদের নিয়ন্ত্রনে চলে গিয়েছিল। ইহা ছিল শ্রেনীভিত্তিক এক্যৈর এমন এক সময় যখন জাতি,ধর্ম,বর্ণ,গৌত্র নির্বেশেষে সবাই একই ল্েয একাকার হয়ে গিয়েছিল ।
এই মহান গণ আন্দোলনের পুর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্ব ছিল মাও: আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির হাতে । সেই সময় পশ্চিম পাকিস্তানে পিপলস পার্টি এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্ব চলছিল তৃনমূল পর্যায়ে । আন্দোলনের তোড়ে রাষ্টীয় সকল র্কাযক্রম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং মহা শক্তিধর আয়ুব খান তার এক ভাষনে একথা স্বীকার করতে বাধ্য হন যে,দেশের প্রতিটি সমস্যার বিষয়ে সিদ্বান্ত এখন নির্ধারিত হচ্ছে রাজপথে ।
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, ১৯৬৯ সালে গনঅভ্যুথান যখন তুঙ্গে, তখন মাওবাদী নেতা ভাসানী চীন ভ্রমনে যান। সেই সময়ে মাও সেতুং ভাসানীকে সরাসরী বলেন যে, ন্যাপ যদি আয়ুব খান কে সমর্থন করে তবে চীন তাকে স্বগত জানাবে। মাও: ভাসানী পরবর্তীতে এক সাাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন । কিন্তু পাকিস্তানের সাধারন জনগণ ঘৃনাভরে আয়ুবের স্বৈরাচারী শাসন ও তার নির্দয় একনায়কত্বকে প্রত্যাখান করেছিল । যে ব্যবস্থাটিকে কেন্দ্রকরে গনমানুষের আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে - তার মূল কেন্দ্রীয় ব্যাক্তিই ছিল স্বৈরাচারী আয়ুব খান ।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর টি-৫৫ টেঙ্ক ঢাকার পথে প্রেরণ শ্রেণী সংগ্রামের জন্য এক মারাত্মক অসুন্তুষ্টি ও বিপর্যয় ডেকে আনে, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানে । ফলে আন্দোলনটি শ্রেণী সংগ্রামের পথ থেকে ক্রমে জাতীয় আন্দোলনে রুপান্তরিত হতে থাকে। ইহা ই মুজিবের আওয়ামী লীগ কে চলমান ঘটনা প্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে ।
শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলনটি মারাত্মকভাবে বাধাঁপ্রাপ্ত হয়, যারা সাহসের সাথে পুঁজিবাদ উচ্ছেদের জন্য এগিয়ে যেতে পারত । কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান (বিপ্লবী পার্টি) ও সমাজতান্ত্রিক নির্দেশনার অনুপস্থিতির কারনে তা সম্ভব হয়নি। ফলে তারা ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দিকে দৃষ্টি দিতে বাধ্য হয়। যা তারা আগে রাজ পথে অর্জন করতে চেয়েছিল ।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অভুতপুর্ব বিজয় লাভের প্রধান কারন ছিল গতানুগতিক ধারার বামপন্থী নেতৃত্ব । আওয়ামী লীগ ছিল একটি বুর্জোয়া ও সংশোধনবাদী দল । যার মতা কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের কোন পরিকল্পনাই ছিলনা বরং ইহা ছিল আপোষ মিমাংশায় বিশ্বাসী । সংবাদ সংস্থা এ এফপির সাথে এক সাাৎকারে শেখ মুজিব এই বলে স্বীকার করে ছিলেন যে, “পশ্চিম পাকিস্তান সরকার জানে না যে, একমাত্র আমিই পূর্ব পাকিস্তানকে কমিউনিজমের হাত থেকে বাচাঁতে পারি । তারা যদি যুদ্ধ করার সিদ্ধন্ত নিয়ে থাকে তবে আমিও শক্তি প্রর্দশন করতে পারি । নক্সালীরা আমার নামে যে কোন কর্মকান্ড শুরু করে দিবে । আমি যদি খুববেশী ছাড় দিতে থাকি, তবে আমিই নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলব। আমি এখন খুব জটিল পরিস্থিতিতে আছি ”। কিন্তু নিপিড়িত ও দুর্দশা গ্রস্থ সাধারণ জনগন সকল প্রকার আপোষ মিমাংশার পথ পরিহার করে সরাসরি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতী নেয় এবং নেতাদেরকে টেনেনিয়ে তাদের পেছনে দাড় করিয়ে দেয়।
যখন আন্দোলন দ্রুত ও তরঙ্গায়ীত ভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী অত্যন্ত নির্মম ও হাস্যকর ভাবে তা দমন করার চেষ্টা চালায় । আর একে সমর্থন ও সহায়তা যোগায় জামায়াতে ইসলামীর ঊদ্যোগে গঠিত আল বদর, আল শামস ও রাজাকার বাহিনী। যারা বাঙ্গালীদেরকে গন হত্যা করতে সেনাবাহিনীকে ঊদ্ভুদ্ধ করে । কিন্তু মুক্তিবাহিনীর বামপন্থী দল সমূহ এবং আওয়ামী লীগের ভেতরকার অগ্রসর অংশ যা পরবর্তীতে জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) এর সশস্র সংগ্রাম এই স্বৈরসাশকের নিমর্মতাকে পরাজিত করে এবং রাস্ট্রের হাত থেকে ক্রমে বিভিন্ন অঞ্চল মুক্ত করতে থাকে ।
মুক্তাঞ্চলের গ্রামগুলোতে নতুন অর্থনৈতিক, সামাজিকও বিচারিক ব্যবস্থা প্রবর্তন শুরু হয় । যা ছিল পঞ্চায়েত বা সোভিয়েত মডেলের । স্বাধীনতা সংগ্রমের নেতাগণ প্রকাশ্যেই ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন যে, ভবিষ্যৎ রাস্ট্র ব্যবস্থা হবে সমাজতান্ত্রিক ধরনের । তারা পরিস্কার ভাষায় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করছিলেন । যারা ভারতে পালিয়ে গিয়ে নিবার্সিত সরকার গঠন করেছিলেন ; সেই দেশের সরকারের সমর্থনে ।
বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রগতিতে ভারতীয় পুজিঁপতিরা সর্তক হয়ে উঠে । ইন্দিরা গান্ধী সহজেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তানী বাহিনীর এই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার কোন প্রকার সম্ভাবনা নেই বরং গনজাগরনের ঢেউ যে ভাবে প্রবলতর হচ্ছে তাতে যে কোন প্রকার নির্লিপ্ততার জন্য দনি এশিয়ার সকল পুঁজিপতিদের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে । সেই জন্যই ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর ভারত র্পুব পাকিস্তানে অভিযান শুরু করে । ইহার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল না পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করা, কারন ইমিধ্যেই মুক্তিবাহিনীর মার খেয়ে তারা পিছু হঠতে শুরু করেছিল । বরং মুক্তাঞ্চলে গড়ে উঠা সোভিয়েত গুলোকে ধ্বংস করাই ছিল ভারতীয় অভিযানের মূল কারন । অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদ ও সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল সেই একই কাজ করতে, পাছে যদি ভারতীয় সেনাবাহিনী তার উদ্দেশ্য সাধনে সফলতা অর্জনে ব্যার্থ হয় !
একটি বিপ্লব পথচ্যুত হয়েছে । পুঁজিবাদের নিয়ন্ত্রনাধীন স্বাধীন বাংলাদেশ এখন আরও মারাত্মক সমস্যায় আক্রান্ত । দারিদ্্র, দুর্দশা ও বঞ্চনা স্বাধীন দেশটিকে খামচে ধরেছে । একজন তরুনী র্গামেন্টস কর্মী কাজের পরিবেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে মন্তব্য করেন যে, “আমাদেরকে পতিতাদের মত দেখা হয় ; তুলনামূলকভাবে ্আরও সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় এমন একটি কাজ সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করতে হবে ”। এত কিছু সত্ত্বে ও এখানে ঘন ঘন সাধারন ধর্মঘট চলছে, শ্রমিক ও তরুনদের আন্দোলনের ঢেঊ প্রতিনিয়ত আঘাত করছে । বাংলার অসমাপ্ত বিপ্লবকে সমাপ্ত করাই এখন তাদের প্রধান কাজ ।