Bengali translation of What would a Socialist Pakistan look like? – Speech at 31st congress of The Struggle (14 March 2012).
অনুবাদ : একেএম শিহাব
পাকিস্তানে আজ ল¶ল¶ মানুষ ¶yধা,দারিদ্র, অসুখ বিসূখের দুর্বিসহ যন্ত্রনায় আক্রান্ত । পুঁজিবাদের নিয়ন্ত্রনে অন্যান্য পণ্যদ্রব্যেরমত ঔষধ পত্র ও শোষনের হতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয় । তবে প্রস্তাবিত সমাজতান্ত্রিক পকিস্তানে কোন নারী পুরুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না । কোন শিশু না খেয়ে ঘুমাতে যাবে না । তারা সব সময় পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাবে ।
অমাদের দেশে ৬৫% শিশু স্কুলে যেতে পারে না । ল¶ল¶ শিশু মৌলিক প্রাথমিক শিা থেকে ও বঞ্চিত । আমার সামনে একটি খবরের কাগজ পড়ে আছে কিন্তু এতে কি ভাল সংবাদ আছে ?সেই লোকটির জন্য যে লিখতে ও পড়তেই জানেন না, নিররতা হলো অন্ধকার সমতুল্য । ইহা হলো মানবতার বিরূদ্ধে জঘন্য অপরাধ । পুঁজিবাদের কাছে ঔষধ ও শিা আনান্য জিনিষের মত একটি ব্যবসা মুনাফা শিকারের হতিয়ার। সমাজতান্ত্রিক পকিস্তানে শি¶v হবে সকলের জন্য ফ্রি এবং স্বারতা কর্মসূচি সকলের আগে বাস্তবায়িত হবে ।
পাকিস্তানে বুর্জোয় প্রশাসন সর্ম্পুনরূপে ব্যর্থ হয়েছে, এমনকি বিদ্যুৎটি র্পযন্ত তারা সঠিক ভাবে দিতে পারছে না । অথচ বিদ্যুৎ ব্যাবস্থাটি নিশ্চিত করা একটি সভ্য সমাজের প্রাথমিক ও মৌলিক দায়িত্ব । এখনও প্রতিদিন ল ল মানুষ লোডশেডিং এর যন্ত্রনা ভোগ করছে ।
পাকিস্তানের বিদ্যুৎ সমস্যার মূল কারন হলো ১৯৯৪-৯৫ সালে তথাকথিত গনতান্ত্রিক শাসন আমলে ব্যাক্তি মালিকানায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরন ব্যাবস্থাটি ছেড়ে দেয়া । ব্যাক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানী গুলো ব্যবহারের তুলনায় অধিক পরিমানে উৎপাদন করতে সম হলে ও তারা যথাযথ ভাবে তা উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করছেনা । অথচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কোম্পানী গুলো প্রতি বছর ৩-৪ বিলিয়ন অর্থ বেশী মুনাফা করতে পারত , কিন্তু পাকিস্তান অন্ধকারেই ডুবে রয়েছে ।
এই কোম্পানী গুলো কেন পুরোপুরি ভাবে পরিচালনা করা হয়না? কারন, এতে সন্তুষজনক মুনাফা হয় না । সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পিত আর্থব্যবস্থায় এইরূপ অনাকাঙ্খিত অবস্থার কথা চিন্তাই করা যায় না । একটি সমাজতান্ত্রিক সরকার সর্ব প্রথমেই পূর্বে স্থাপিত বিদ্যু কেন্দ্র গুলো জাতীয়করন করে নিবে এবং বড় বড় হাইড্রো ইলেকট্রিক প্রকল্প গুলো জাতীয়করন করার সাথে সাথে কয়লা,তেল, গ্যাস সহ অন্যান্য জ্বালানীর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
তাহলে, এই পরিস্থিতিতে কে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে? অবশ্যই পরগাছা কোম্পানী মলিকরা নয়,তা উৎপাদন করবে শ্রমিকশ্রেণী । আমরা যখন পরগাছাদের উচ্ছেদ করতে পারব, তখন এক ঘন্টার মধ্যেই তার সমাধান করে ফেলব।
পাকিস্তান পিপলসপার্র্টি প্রায়সই অঙ্গীকার করে থাকে যে তারা লোডশেডিংএর সমাধান করবে কিন্তু তাকখনোই বাস্তবায়ন হয়না, কারণ নেওয়াজশরীফ, জারদারী, গিলানী সহ অন্যান্য ডানপন্থার নেতারা ঐ করর্পোরেশন গুলোর মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত নয়, কেননা, তাদের বড়ী ঘরে তো কখন ও বিদ্যুতের অভাব হয় না। যেভাবে গরীব ও সাধারণ জনগন লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনা বিদ্যুতের ও বর্ধিত মূল্য পরিশোধ করে থাকে । এই ভাবেই দরিদ্র মানুষ ভর্তুকি দিয়ে থাকে ধনীক শ্রেণীকে ।
এমনটি কেন হবে? অথচ পাকিস্তানের রয়েছে বিপুল পরিমান প্রকৃতিক সম্পদ যা আজ ও ব্যবহার শুরু করা যায় নি । শুধুমাত্র বেলুচিস্থানের মাটির নিচেই রয়েছে ১৫০০ বিলিয়ন কিঊবিক গ্যাস, বিপুল পরিমান কয়লার ভান্ডার । কেন তারা তা সমাজের উপকারে ব্যবহার করতে পারছেন না ? কিন্তু, এর পরিবর্তে সকল মূল্যবান সম্পদরাশী লুন্ঠন হয়ে যাচ্ছে বিদেশী কোম্পানী ও পাকিস্তান সরকারের অভ্যন্তরে থাকা তাদের দেশীয় এজেন্টদের মাধ্যমে ।
পাকিস্তান কোন ভাবেই একটি গরীব দেশ হতে পারেনা । এর রয়েছে বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ কিন্তু দুর্নীতি পরায়ন শাসক চক্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধী তা র্কাযকর ভাবে জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেনি। ল্য করুন, পাকিস্তানের সম্পদ কিভাবে অপচয় হচ্ছে ! জাতীয় আয়ের প্রায় ৬০% অর্থ খরচ হয়ে যায় শুধুমাত্র বিদেশী ঋনের সুদ প্রদান করতে গিয়ে । প্রতি বছর পাস্তিানের কৃষক শ্রমিকের একটি বিশাল অংকের অর্থ চলে যায় বিদেশী ব্যাংকার ও পুজিঁপতিদের পকেটে ।
একটি সমাজতান্ত্রিক সরকারের প্রথম কাজই হবে সকল প্রকার বিদেশী ঋন বাতিল করা । প্রকৃত সত্য হলো এইরূপ ঋন ইতিমধ্যেই পরিশোধ করা হয়ে গেছে। তা একবার নয়, বারবার । আর একটি পয়সা ও ঐপরজীবিদেরকে দেয়া হবে না ।
অধিকন্ত সমাজতান্ত্রিক সরকার বিদেশী বাণিজ্যের ঊপর একচাটিয়া আধিপত্য বন্ধ করে সরকারী অর্থের অবাধ আগমন র্নিগমন নিয়ন্ত্রন করবে ।
৬০% অর্থ সম্পদ বিদেশী ব্যাংকার ও পুজিঁপতিদের প্রদানের পর বাকী ৩০% পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়, নতুন অস্র, বিলাশবহুল গাড়ী, বড় বড় সুরম্য বাড়ী এবং মোটা অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স তৈরী করার জন্য, এর পর সাধারণ জনগনের জন্য আর কি থাকে? সর্বোপরি পাকিস্তানের সবকিছু লুঠ হয়ে যাচ্ছে । তলানিতে পড়ে থাকা ১০% অর্থ অন্যান্য সকল কাজে খরচ করা হয় যেমন :- স্বাস্থ্য, শিা, গৃহায়ন,পরিবহন এবং অবকাঠামো নির্মানের জন্য । মাত্র ০.৪% খরচ করা হয় স্বাস্থ্য সেবার জন্য এবং লজ্জাস্বকর ভাবে মাত্র ১.৫% অর্থ খরচ করা হয় শিার জন্য, এই তথ্যাবলীই পাকিস্তানের ঘৃনিত বুর্জোয়াদের অপকর্মের চিত্র তুলে ধরে । তাদের সীমাহীন লুন্ঠনের ফলে পাকিস্তান তার শিল্পের বিকাশের জন্য প্রয়েজনীয় গবেষনা ও উন্নয়ন করতে পরছেনা এবং বিপর্যস্থ অবকাঠামো পুর্ননিমান, বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ আহরন করা যাচ্ছে না । দুনিয়ার তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশ গুলোতে আজ এই অবস্থা সর্বত্রই বিরাজমান । বলা হয় নাইজেরিয়া তেলের সমুদ্রে ভাসছে, অথচ সেই দেশের মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে জীবন যাপন করছে । সম্পদের অভাবের জন্য এমনটি হচ্ছেনা বরং বুর্জোয়া ব্যবস্থাই মূলত এর জন্য দায়ী ।
পাকিস্তানে একটি সমাজতান্ত্রিক সরকার এই জংলী ও বর্বর ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে উৎপাদন শক্তিকে জাতীয়করণ করবে যা সাধারন জনগনের সেবায় নিয়োজিত হবে । সমাজতন্ত্রের অর্থই হলো মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য উৎপাদন ; ব্যাক্তিগত মুনাফা অর্জনের জন্য নয় ।
কৃষি, আমাদের জাতীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপুর্ণ স্থান দখল করে আছে । বিগত দিনে ষ্ট্যালিন পন্থীরা পাকিস্থানের সামন্তপ্রথা নিয়ে বহু অর্থহীন কথবার্তা বলেছেন । মূলত: বহু পূর্বেই পাকিস্তানে কৃষিসহ সামন্তবাদের স্থান দখল করে আছে পুজিঁবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা । পাকিস্তানে পুজিঁবাদ তার ব্যার্থতার জন্যই বিশাল ভূমি মালিক ও সামন্ততান্ত্রিক চিন্তা চেতনার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে; সর্বত্র সবকিছুকেই প্রভাবিত করছে । ১৯৭৪ সালে জুলফিকার আলী ভুট্টো কৃষি সংস্কার করতে চেয়েছিলেন, এমন কি জমি জমার জাতীয় করন করতে ও ঘোষনা দিয়েছিলেন । কিন্তু তা সামন্ত প্রভুদের কারণে সফল হতে পারেনি, তারা তাদের জমির মালিকানা ব্যাংকের নিকট বন্ধক রেখে নগদ টাকা সংগ্রহ করে ফেলে ।
আমরা অবশ্যই জমি ও ব্যাংক উভয়ই জাতীয় করন করব, এবং জমিগুলো সেই সব মানুষের কাছে দিব যারা নিজেরা চাষাবাদ করবেন । আমরা কৃষকদেরকে যৌথ কৃষিখামার গড়ে তোলতে উৎসাহ ও সহযোগীতা করব, যার মাধ্যমে প্রত্যেক কৃষক সম্মান জনক উপার্জন, সুন্দর বাড়ী, শিা ও স্বাস্থ্যসেবা পাবেন এবং তাদের জন্য উপযুক্ত পেনশন প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে । বড় আকারের কৃষি খামারে অত্যাধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সেচব্যবস্থা ব্যবহার করা অনেক সহজতর হবে, এবং উৎপাদন ও বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পাবে । কৃষিতে জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং প্রয়োগ করে নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে সম হয়ে উঠার সাথে সাথে খাদ্যের মজুদ বৃদ্ধি ও এর উচ্ছমূল্য ইতিহাসের বিষয়ে পরিনত হবে।
মহান লেনিন যৌথ পদ্ধতীতে অভাবনীয় উন্নয়নের সূত্র ব্যাখ্যা করে গেছেন, যা আমরা পকিস্তানেই পরিস্কারভাবে দেখতে পাচ্ছি । কৃষকের জমির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আধুনিক মহাসড়ক, যা ইতি মধ্যেই ১০০০ বছরের পরিবর্তন সাধন করে ফেলেছে । কেবল মাত্র সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাই ্প্রকৃত উন্নয়নের স্বাদ এনে দিতে পারে । একটি পরিকল্পিত অর্থনীতি নিশ্চিত করতে পারে মুনাফার শৃংখল মুক্তি এবং নিশ্চিত করতে পারে মানুষের সেবা । ইহাই হলো প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা সন্তুষজনক ভাবে মেটানোর সহজতম পথ ও পন্থা । বর্তমানে প্রচলিত ব্যবস্থায় মানুষের মৌলিক চাহিদা গুলো ও পুরণ করা যাচ্ছে না । শুধু মাত্র অপুষ্টি জনিত কারণে প্রায় ৬০% পাকিস্তানী শিশুর স্বাভাবিক স্বাস্থ্যগত কারণে শারিরীক বিকাশ ও বৃদ্ধি হচ্ছে না । এখানে ৮০% লোক দারিদ্র সীমার নিচে জীবন যাপন করছে ।
আসুন এবার আমরা পুঁজিবাদের অন্যান্য অপরাধের দিকে নজর দেই ।
পরিবহন : বৃটিশ রাজের শাসন ব্যবস্থার শেষ প্রান্তে এসে ভরতকে সর্বপ্রথম রেলওয়ে স্থাপনের মাধ্যমে এক সূত্রে গ্রথিত করে । আর এটাই ছিল সত্যিকার ঐক্যব্ধ ভরতীয় উপমহাদেশ । যদি ও এটা করা হয়েছিল শোষণ এবং শাসন বজায় রাখার জন্য কিন্তু নিসন্দেহে এটা ছিল একটি যুগান্তকারী ও প্রগতিশীল পদপে । কিন্তু পাকিস্তানী ঘৃন্য বুর্জোয়ারা স্বাধিনতার পর থেকে রেলওয়েকে ধ্বংস করে আসছে । ফলে আমরা পথে পথে বিড়ম্ভনার স্বীকার হই । সড়কের ধারন মতার চেয়ে বিপুল পরিমানে গাড়ীর বহর চলছে, গাড়ীর্পাক করার ও উপযুক্ত জায়গা নেই । শহর নগর আজ ট্রাফিক জ্যামে বির্পযস্ত, ভয়াবহ পরিবেশ দূষন,শব্দদূষন, সড়কদূর্ঘটনা এখন প্রতিদিনের নিত্য ঘটনা ।
একটি সমাজতান্ত্রিক সরকার সকল পরিবহন ব্যবস্থাকে জাতীয় করণ করবে এবং সড়ক পথ, রেলপথ,আকাশ পথ এবং সমূদ্রপথ কে একটি সমন্বিত ও পরিকল্পিত ব্যবস্থার আওতায় এনে গন বান্ধব পদ্ধতিতে পরিচালনা করবে । ভ্রমণ খরচ যতটুকু সম্ভব কমিয়ে আনা হবে । একটি সমাজতান্ত্রিক পরিবহণ ব্যবস্থা মানেই হলো সকলের জন্য স্বল্প খরচে, সুদ ও পরিচ্ছন্ন যাতায়াত ব্যবস্থা । এটা সরকার সকলের জন্য বিনামূল্যেও ব্যবস্থা করতে পারে , প্রথমিক ভাবে কম পে নগর ও শহর পর্যায়ে । বুর্জোয়ারা রেলওয়েকে ধ্বংস করছে, রেলওয়ের জন্য যে পরিসম্পদ প্রয়োজন তা পুঁজিপতিরা দিতে চায়না । জাতীয় করনকৃত রেলওয়ে অবশ্যই পাকিস্তানের শ্রমিকশ্রেণীর নিয়ন্ত্রনে থাকবে। শ্রমিকদেরকে রেলওয়ে ব্যবস্থাপক নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হোক । আমি প্রস্তাব করছি কমরেড ফজলে কাদেরকে পাকিস্তান রেলওয়ের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের দয়িত্ব দেয়া হোক । আমি নিশ্চত যে, বর্তমান ব্যবস্থাপকের চেয়ে উনি অনেক ভালো পরিচালনা করতে পারবেন।
দেশ বিভক্তির পর থেকেই পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী আমাদের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করছেন । সেই মিথ্যা গল্প স্কুলের শিশুদেরকে ও শেখানো হয় । তারা জিন্নাহর আদর্শে দেশ গড়তে চেষ্টা ও করছে । কিন্তু এদেশের সত্যিকার ইতিহাস হলো জিন্নাহ এদেশের আর্দশ নয় ; আমাদের আসল আদর্শ হলো আমাদের বিপ্লবীরা যেমন, ভগৎ সিং (যিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরোদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ফাঁসির মঞ্চে প্রান দিয়েছেন, ১৯৩১ সালে) ।
বিগত ৬ দশকে বুর্জোয়া প্রশাসন কি অর্জন করতে পেরেছেন ? চার পার্শে¦ চেয়ে দেখুন ! সবকিছুই নষ্টামি আর নুংরামিতে পরিপূর্ণ করে রেখেছে । যথাযথ ভাবে পয়:প্রণালী ব্যবস্থাটি ও ঠিকভাবে তৈরী করতে পারেননি । সবর্ত্র দুর্গন্ধ, ভাঙ্গা চুড়া ঘড়বাড়ী। কর্দমাক্ত বস্তির অমানবিক পরিবেশে জনগনকে বসবাস করতে বাধ্য করছে । অন্যদিকে ধনিক শ্রেণীর লোকেরা বসবাস করছে সুরম্য প্রাসাদতুল্য ঘরবাড়ীতে ।
গৃহ প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক চাহিদা ও মানবাধিকার, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে । গৃহহীনদের সমস্যা সমাধানের জন্য অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাকিস্থান সমাজতান্ত্রিক সরকার সকল অব্যবহৃত গৃহ, পরিত্যক্ত ঘরবাড়ী এবং বিশাল ম্যানসন সমূহকে গৃহহীনদের জন্য খোলে দেবে ।
পাকিস্তানের সমাজতান্ত্রিক সরকার কোম্পানীর সকল বড় বড় ভবনগুলো, সিমেন্ট এবং ইট কোম্পানী, ষ্টিল এবং প্লাষ্টিক শিল্পসমূহ জাতীয়করণ করে নিবে । আমরা মাত্রএক বছরের মধ্যে একটি বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে ল ল গৃহ নির্মান করব । ইহা সম্ভব, কেন নয় ? গৃহ নির্মানের জন্য কি কি প্রয়োজন ? আমাদের প্রচুর জমি আছে । বিপুল পরিমান ইট, রড এবং সিমেন্ট অলস পড়ে আছে এবং আরো প্রচুর পরিমানে আমরা তৈরী করতে সম । এছাড়া ল ল বেকার শ্রমিক আছে যাদেরকে আমরা গৃহ, রাস্তা এবং স্কুল নির্মানের কাজে ব্যবহার করতে পরি ।
এখন পাকিস্তানে নগরায়নে ও শহরায়নে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই । শহর সমূহ যেমন করাচি আজ একটি দু:স্বপ্নের নাম । তা এখন মানুষের বাস উপযোগীতা হারাতে বসেছে । সমাজতান্ত্রিক পাকিস্তানে প্রতিটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত জয়গা সহ বাসগৃহ প্রদানের গ্যারান্টি নিশ্চিত করা হবে । ভাড়া হবে খুবই কম অথবা ভাড়া প্রথাই উঠিয়ে দেয়া হবে । সাবেক সৌভিয়েত ইউনিয়নে প্রকৃতই গ্যাস,বিদ্যুৎ ও টেলিফোন সহ বাসগৃহ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছিল এবং ইহা অবশ্যই সম্ভব । সমাজতান্ত্রিক পাকিস্তানের নিজের শত্র“দেরকে মেকাবেলা করতে হবে, আভ্যন্তরিণ ও বহির শত্র“ এবং প্রতি বিপ্লবীদেরকে কঠোর হাতে দমন করতে হবে । আমাদের সেনাবাহিনীর দরকার হবে ; তবে প্রচলিত সেনাবাহিনীর মত নয় । ইহা একটি উৎপিড়ক যন্ত্রে পরিনত হয়েছে, তারা যতটা না বিদেশী শত্র“র বিরোদ্ধে ভূমিকা রাখছে, তার ছেয়ে বেশী বিরূপ আচরণ করছে দেশের জনগণের প্রতি । বেলুচিস্থান ও ফাখতুয়ানার মানুষের সাথে তারা যে নির্দয় ও অমানবিক আচরন করছে তাই হলো এর জ্বলন্ত উদাহরণ ।
সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের লোকদেরকে একটি সুবিধাভোগী ধনিকশ্রেণী থেকে নিয়োগ প্রদান করে সেই ভাবেই গড়ে তুলা হয় । তারা নিজেদেরকে সমাজ থেকে আলাদা একটি বিশেষ শ্রেণী হিসাবে দেখে থাকে । নিজেদেরকে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে এবং তা তারা নিজেদের প্রয়োজনে উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যবহার ও করে থাকে । কিন্তু সাধারণ সৈনিকেরা আসে সাধারন শ্রমিক ও কৃষক পরিবার থেকে । তারা সেই শ্রেনীগত একই রকম সমস্যা এখানেও মোকাবেলা করে থাকে । যেখানে উচ্চ পর্যায়ের জেনারেলগণ বিলাশ বহুল জীবন যাপন করেন তখন সাধারন সৈনিক, এনসিও, এবং জুনিয়র অফিসারদেরেকে অত্যন্ত মারাত্মক ও বিপদজনক স্থান গুলোতে পঠানো হয় এবং সেখানে তারা প্রতিদিন আহত ও নিহত হচ্ছে । মোট তথা হলো, সমাজের মত সেনাবাহিনীতে ও শ্রেণী বৈশম্য বিরাজমান ।
সমাজতান্ত্রিক পাকিস্তানের সেনাবাহিনী হবে গণসেনাবাহিনী । আমরা সেনাবাহিনীতে গনতন্ত্র চর্চা করব এবং সকল স্তরের অফিসার সৈনিকদের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন । সৈনিকগণ হবেন জনগনের সেবক; প্রভু নয় । সমাজতান্ত্রিক পাকিস্তানের সকল সম কৃষক ও শ্রমিকদেরকে মৌলিক সামরিক প্রশিণ প্রদান করা হবে । প্রতিটি কারখানা ও গ্রামে গনমিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তুলা হবে, যারা আমৃত্যু বিপ্লবের সুরার জন্য লড়াই করে যাবেন, এই পদপে গুলো পরমানবিক অস্রের চেয়ে ও র্কাযকরী হবে ।
পুজিঁবাদীরা প্রতিনিয়ত তাদের শোষন বৃদ্বি করছে । তারা উৎপাদন বৃদ্বির কথা বলে, কিন্তু বাস্তবত তারা মুনাফাবৃদ্বির কথাই বলে । উৎপাদন আর মুনাফা এক জিনিষ নয় । প্রকৃত সত্য হলো, পুঁজিবাদের আওতায় ব্যবসা বিভাগের ছাত্র/ছাত্রীদের কোন ভবিষ্যৎ নেই । প্রকৃত বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার সুযোগ কেবলমাত্র সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরিকল্পিত অর্থনীতিতেই সম্ভব । যেখানে বৈজ্ঞানিক,প্রযুক্তিবিদ,প্রকৌশলী ও শ্রমিকশ্রেণীর গনতন্ত্রের মাধ্যমে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়াটি সংগঠিত ও নিয়নত্রিত হবে।
সমাজতান্ত্রিক পকিস্তানে কোন মাথাভারী আমলা চক্রের প্রয়োজন হবে না, যেমন বর্তমানে শ্রমিক শ্রেণীর ঊৎপাদিত সম্পদের সিংহভাগ তারাই ভোগ করছে । ব্যয় সাশ্রয়ী, দতা এবং গনতান্ত্রিক পন্থায় শ্রমিকশ্রেণী নিজেরাই প্রশাসন ব্যবস্থা বিভিন্ন কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালনা করবে । ১৯১৭ সালে সৌভিয়েত ইউনিয়নে যেমন ভাবে শুরু হয়েছিল । সৌভিয়েত শব্দটি হলো রাশিয়ান শব্দ এর অর্থ হলো পরিষদ । কিন্তু আমাদের ভাষায় এর সুন্দর শব্দ আছে আর তা হলো পঞ্চায়েত, ইহাই হলো সৌভিয়েতেরে সমার্থক শব্দ।
পঞ্চায়েতই অর্থনৈতিক ও সামজিক সহ সকল প্রকার উন্নয়নমূলক সিদ্ধন্ত গ্রহন করবেন । তারা জাতীয় সংসদেরে ছেয়ে ও বেশী মতাধর হবেন । সাধারণ জনগন এর উপর সবচেয়ে বেশী আস্থাশীল হবেন । যেখানে আজ কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগনের আস্থা শূন্যের কোঠায় ; যেখানে এখনের মত জনগন পুলিশ ও সরকারের ভয়ে ভীত থাকবেন না, আমাদের হাই কোর্টে বিচারকের প্রয়োজন নেই । এর পরিবর্তে প্রতিটি রাজপথে,গ্রামে ও কারখানায় জনগনের আদালত থাকবে । বর্তমানে প্রচলিত বিচরিক প্রক্রিয়া ও পুলিশের চেয়ে তা অপরাধ দমনে অধিকতর কার্যকরী হবে ।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব হলো জনগনের জেগেউঠা । বিপ্লব জনগনকে তাদের নিজস্ব মতায় অধিষ্ঠিত করবে, সত্যিকার মানবিকতায় অভিষিক্ত হবে, তাদেরকে নতুন মানবজীবন উপহার দিবে । সমাজতান্ত্রিক পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ প্রথম বারের মত বুঝতে পারবে যে তারাই হলো সমাজের প্রকৃত মালিক । তারা আশ্বস্ত হবেন যে আর কেহই তাদের নিপিড়ন করতে পারবে না ।
পুজিঁবাদের শাসনে মানুষ মেটেই স্বাধিন নয় । তারা পুজিঁর দাস । ইহা হলো একটি অমানবিক সমাজ যেখানে মানুষকে অর্থের দাসে পরিনত হতে বাধ্য করে, একে অন্যের সাথে প্রতিযোগীতায় এবং পশুর মত বাচাঁর লড়াইয়ে লিপ্ত করে । এই অসুস্থ প্রতিযোগীতার কর্মকান্ড প্রায়সই স্কুলের বাচ্চাদের মত অভিবেচনা প্রসুত হয়ে থাকে । ইহা একটি অনৈতিক এবং অমানবিক দর্শন । সমাজতন্ত্র সমাজে একভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করে থাকে । যার ভিত্তি হলো সামাজিক স¤প্রীতি, যেখানে মানুষ একে অন্যকে সম্মান ও সহযোগীতা করতে শিখবে । সেই সমাজে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক ও হবে সর্ম্পূণ ন্যায়পর ও স্বচ্ছতা পূর্ণ।
মানুষের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য যে দুটি প্রধান অন্তরায় আছে তা বিদূরিত করা হবে ; এর একটি হলো উৎপাদন ব্যবস্থার উপর ব্যক্তিগত মলিকানা, আর অন্যটি হলো জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করা । বর্তমান পাকিস্তানের সীমানা ও প্রশাসন হলো সমপূর্ণ রূপে কৃত্রিম এবং নরবড়ে ।
আমেরিকার সমাজতন্ত্রি কমরেড জন রিড রাশিয়ার বিপ্লবের উপর একটি চমৎকার বই লিখেছেন, এর নাম হলো দুনিয়া কাপাঁনো দশ দিন । এই ভাবেই, সমাজতান্ত্রিক পাকিস্তান অল্প সময়ের মধ্যেই দনি এশিয়ায় এক বিপ্লবের ঝড় তুলবে, ইহা হবে অপ্রতিরুধ্য,জনগন অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে ভারতে,বাংলাদেশে,শ্রীলংকায়,আফগানিস্তানে,নেপাল, ইরান এবং অন্যান্য দেশে ।
পাকিস্তানের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব খুব দ্রুতই ভারত ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরবে । এই অঞ্চলের কৃষক,শ্রমিক জনতা, সকল কৃত্রিম সীমান্ত বাঁধা ভেঙ্গে ফেলবে গড়ে তুলবে একটি সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন যেখানে থাকবে সকল জাতি স্বত্ত¡ার স্বীকৃতি এবং পূর্ণ স্বায়িত শাসন । উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠার সকলপ্রকার সীমান্ত যুদ্ধ,হত্যা,জাতিয়ীয় নিপিড়ন এবং সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার পরিসমাপ্তি ঘটবে । এহা বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন গড়ার েেত্র এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে ।
আমরা আমদের আত্ম নিয়ন্ত্রনাধিকার বজায় রাখতে সম হবো । যদি বেলুচিস্থানের জনগন নিজেদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তবে আমরা এতে কোন আপত্তি করবোনা । আমরা গভীর ভাবে উপলব্দি করছি যে,সকল মানুষকে সর্বোত্তম সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতা,সমতা ও স্বেচ্ছাকৃত ভাবে ফেডারেশনে যোগদান করার মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে । উপমহাদেশের সকল সম্পদের সমাহার ঘটিয়ে সমাজতান্ত্রিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করলেই আমরা আমাদের এ মাটি ও মানুষের সীমাহীন সম্ভাবনার বিষয়টি বুঝতে পরব ।
পরিকল্পিত অথনীতিতে ১০% প্রবৃদ্ধি অর্জন করা হলো একটি খুবই সাধারণ ল্যমাত্রা । আর ইহা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময় সীমাতে দ্বিগুন বৃদ্বি পাবে । ইহা দারিদ্রতা,গৃহহীনতা ও নিররতা দূরী করনের জন্য যতেষ্ট । কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদা পুরন করা হলো সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা মাত্র । আমাদের প্রধান ল্যই হলো এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যেখানে পর্যাপ্ত ঊৎপাদন হবে । যা নারী ও পুরুষের সামগ্রীক যোগ্যতা বিকাশের পরিবেশ তৈরী করে দিবে ।
পর্যাপ্ত উৎপাদনসমৃদ্ধ একটি অর্থ ব্যবস্থার সৃষ্ঠি,সমাজের মানুষের বাচাঁর লড়াই ও শ্রেণী সংগ্রামের অবসান ঘটাবে । ইহা সমাজের সর্বস্থরে পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং প্রকৃত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভিত্তিভূমি রচনা করবে । শিল্প,বিজ্ঞান,সাহিত্য,কলা ও সঙ্গিত ব্যাপকভাবে বিকশিত হবে । যখন মানুষ সকল অভাব অভিযোগ থেকে মুক্তি পাবে, তখন রাষ্ট্র তার প্রয়েজনীয়তা হারাতে থাকবে এবং ধীরে ধীরে সমাজের অতলে রাষ্ট্র হারিয়ে যাবে । মানব সমাজের উন্নয়নের নতুন ধাপের সূচনা হবে । ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের ভাষায় বলতে হয়,মানুষের অভাব মুক্তি মানুষকে পৌঁছেদেয় স্বাধীনতার প্রকৃত স্বর্গরাজ্যে ।